মিয়ানমারের প্রথম ধাপের ভোট শেষ
মিয়ানমারে তিন ধাপের নির্বাচনের প্রথম দফা শেষ হয়েছে রোববার (২৮ ডিসেম্বর), এমন এক পরিস্থিতিতে যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে, নেতারা কারাগারে এবং দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ভোট দিতে পারছেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কেবল সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সীমাবদ্ধ। চূড়ান্ত ফলাফল ২৫ জানুয়ারি জানা যাবে। সেনা জান্তা ইতিমধ্যেই ৪০টি রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়েছে, যার মধ্যে নোবেলজয়ী অং সান সু চির এনএলডিওও আছে। সমালোচনা দমনকারী নতুন আইনের প্রয়োগে জুলাই থেকে শতাধিক মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।
তবুও কিছু অল্পসংখ্যক দল প্রার্থী দিতে পেরেছে। কায়িন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান নান্ট খিন আয়ে বলেন, “কিছু তো করতে হবে, হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না।” তবে বড় শহরগুলো—যেমন ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়—এ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। মান্দালয়ের এক প্রার্থী বলেন, “আমরা আশা থেকে নয়, বরং ভয় থেকে ভোট দিচ্ছি।”
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর মিয়ানমারের অধিকাংশ সময়ই সেনা শাসনের অধীনে ছিল। ২০১০ সালের পর এক দশক গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতি হলেও ২০২১ সালে সেনাবাহিনী আগের বছরের নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করে ক্ষমতা দখল করে।
এই নির্বাচন আংশিকভাবে প্রতিবেশী চীনের সন্তুষ্টির জন্য আয়োজন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী দেশটির অর্ধেকেরও কম এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্বাচনকে বৈধ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে জান্তা। রাজধানী নেপিদোতে ভোট দিয়ে সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, “সেনাবাহিনী পরিচালনা করছে বলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু।” বিরোধীরা এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী-ঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) বড় দল হিসেবে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভোট শুরুর আগেই তাদের কার্যালয় ও একটি ভোটকেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটে, একজন নিহত এবং অনেক আহত হন।
পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনকে সমালোচনা করেছে, তবে ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ‘অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। দেশের অর্থনীতি ২০২০ থেকে ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত, বড় শহরে দৈনিক মাত্র ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
কিছু প্রার্থী ভোট প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ বলে দেখছেন। ইয়াঙ্গুনের প্রার্থী উ কিয়াও মিন হেত বলেন, “সশস্ত্র পথ সঠিক নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান দরকার।” অনেক সাধারণ মানুষও ভোট দেননি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আরকার মিন নাইং বলেন, “এই নির্বাচন জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে না। ভোট না দেওয়াই আমার প্রতিবাদ।”
মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ললিতা হানওং বলেন, সেনাবাহিনী-ঘনিষ্ঠ ইউএসডিপি আবারও ক্ষমতায় আসবে। নির্বাচন মূলত সেনাবাহিনীর দীর্ঘায়িত শাসন নিশ্চিত করার জন্য সাজানো হয়েছে। ইউএসডিপি ও সেনা সমর্থিত অন্যান্য দল একত্র হয়ে পরবর্তী সরকার গঠন করবে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫