আলম-গীর হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
দেশে সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠাসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানা সংকট নিরসনে সরকারের কাছে সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের উপদেষ্টা আমজাদ হোসেন হৃদয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আশিক খান, সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান রাফিসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮০ জন তরুণ কলাম লেখক দায়িত্বশীল নাগরিক অবস্থান থেকে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, নাগরিক নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার লক্ষ্যে এ যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়—
১. সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার: রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সব হত্যাকাণ্ডে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও উচ্চপর্যায়ের তদন্ত নিশ্চিত করে দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলার টেকসই উন্নয়ন: সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীল নীতি গ্রহণ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান জোরদার করতে হবে।
৩. আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি: সহিংসতামুক্ত ও ভয়মুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ ও জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বহির্বিশ্বের সঙ্গে ন্যায্য ও সমন্বিত সম্পর্ক: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর কূটনীতি জোরদার করতে হবে।
৫. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাস্ফীতি রোধ: বাজার তদারকি, পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও সমন্বিত নীতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রক্ষা করতে হবে।
৬. সাইবার স্পেসে তথ্য নিরাপত্তা ও গুজব রোধ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও গুজব প্রতিরোধে সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতা রক্ষা: লেখক, সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকদের নিরাপদ মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের সভাপতি সজীব প্রধান বলেন, “আমরা একটি নিরাপদ দেশমাতৃকার স্বপ্ন দেখি। সে লক্ষ্যেই দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে এই সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকার এগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে চলমান সংকট উত্তরণ সহজ হবে।”
সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার যদি আমাদের সাত দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়, তবে দেশের বর্তমান বহুমুখী সংকট অনেকাংশে নিরসন সম্ভব।”
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলম-গীর হোসেন বলেন, “এই সাত দফা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়; এটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার একটি রূপরেখা।”
এছাড়া বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।